- 13 December, 2021
- 0 Comment(s)
- 503 view(s)
- লিখেছেন : আফরোজা খাতুন
মগরাহাটে বিয়ে হয়েছিল নাজমা বানুর। ষোল বছরের দাম্পত্য জীবনের সমাপ্তি ঘটল এই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে। এখন তাঁর চৌত্রিশ বছর বয়স। সঙ্গে মানসিক ভারসাম্যহীন চৌদ্দ বছরের পুত্র সন্তান। স্বামী টেলারিং-এর কাজ করতেন। হঠাৎ স্বামীর মৃত্যু নাজমা বানুর জীবনকে প্রখর জীবনযুদ্ধের মুখে দাঁড় করিয়েছে। যৌথ সংসারে ছিলেন। স্বামী নিজের উপার্জনে পৈতৃক বাড়িতেই একটা পাকা ঘর করেন। স্বামীর মৃত্যুর শোক কাটানোর আগেই নাজমা বানুর কানে ব্যক্তিগত আইনি বিধান জানিয়ে দিলেন শ্বশুর-শাশুড়ি। স্বামীর পৈতৃক সম্পত্তিতে তাঁর এবং তাঁর সন্তানের আর কোনও অধিকার নেই। স্বামীর অর্থে তৈরি পাকা ঘরটাও তাঁদের নয়। সেটা যেহেতু শ্বশুরের জমিতে। তবে গ্রামের মানুষ যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছেন তাঁর শ্বশুর বাড়ির মানুষকে। বাচ্চাসমেত তাঁকে বাড়িতে রাখার সুপারিশ করছেন। গ্রামের চাপে নত না হয়ে, শ্বশুর-শাশুড়ি অন্য কৌশলে নাজমাকে আপাতত বাড়ি থেকে বের করতে সফল হয়েছেন। নাজমার বাবা-মাকে ডেকে মেয়েকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। অল্প বয়স, শ্বশুরবাড়িতে থাকা নিরাপদ মনে করেননি সে বাড়ির লোকজন। ইজ্জত রক্ষা করে চলার জন্য বাপের বাড়ি নাকি নিরাপদ। তারচেয়েও বেশি নিরাপদ বিয়ে দিয়ে দেওয়া। তাই নাজমাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ভার বাড়াতে হয়েছে।
নাজমা তাঁর পরিবর্তিত নাম। কারণ ঘটনা জানানোর সময় অনুরোধ করেছেন আসল নাম গোপন রাখতে। এখন শ্বশুরবাড়ির লোককে তুষ্ট করে মা-ছেলের জন্য অন্তত একটা ঘর পাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই অভিযোগগুলো প্রকাশ্যে আনতে চাইছেন না। তবে তিনি আশঙ্কা করছেন মানুষের চাপে তাঁর ভারসাম্যহীন ছেলের নামে সামান্য কিছু দিতে পারেন। পরিস্থিতি সাময়িকভাবে আটকানোর জন্য। কিন্তু ছেলের সঙ্গে তাঁকে থাকতে দেবেন না সেটা স্পষ্ট। আর নাজমার ভয়টা এখানেই। দেওয়া জিনিস অসুস্থ ছেলের কাছ থেকে ফিরিয়ে নিতেও তাঁদের বেগ পেতে হবে না। নাজমা বুঝতে পারছেন তাঁর স্বামী বেঁচে থাকলে যে সম্পত্তির অংশীদার হতেন এখন সেগুলো দুই দেওরের ভাগে চলে যাবে। তিনি তাঁদের জন্য বাড়তি বোঝা। তাঁকে তাড়িয়ে দিতে পারলে ঝঞ্ঝাট মিটে যায়। তাই নিরাপত্তার নাম করে তাঁর বাবা-মাকে প্ররোচিত করছেন বিয়ে দেওয়ানোর। কিন্তু অসুস্থ ছেলেকে ছেড়ে নাজমা কোথাও যাবেন না। যেভাবেই হোক রোজগার করে অসুস্থ ছেলের মুখে খাবার তুলে দেবেন মাধ্যমিক পাশ নাজমা। তিনি ভরসা করে অন্য কারো হেফাজতে ছেলেকে রাখবেন না। তাঁর প্রশ্ন, ‘বিয়ে যদি মেয়েদের নিরাপত্তা হয়, তাহলে আজ তাঁর এই পরিণতি কেন? স্বামীর বাড়ি মেয়েদের নিজের আশ্রয় বলা হয়। অথচ স্বামী মারা গেলে তার স্ত্রীকে পথে নামিয়ে দিতে ধর্মে বাধে না। এই আইন কোন দিক থেকে নিরাপদ?’
সুশীল সমাজের কিয়দংশ এসব খবরে উসকানির গন্ধ পান। আর মনে করেন মৃতের পরিবার ঠিকমতো বোঝাতে অক্ষম হয়েছেন মৃতের বাবা-মাকে। দয়া-ভিক্ষার থলিটা যথাযথ ধরলেই নাকি মৃতের পরিবারকে সম্পত্তি দান করা হয়। তাঁরা দানে আগ্রহী। অধিকারে নয়। আইনি অধিকারের দাবি উঠলেই দাতাদের মনে আশঙ্কা জেগে ওঠে। দানের পবিত্র কর্ম থেকে এই বুঝি মহান মানুষরা বঞ্চিত হন। এব্যাপারে তাঁদের নিপুণ ব্যাখ্যাও রয়েছে। মৃতের পরিবার শরিয়ত অনুযায়ী পৈতৃক সম্পত্তির হক পাবে না এটা সত্য তবে কেউ দিতে চাইলে বাধা নেই। কিন্তু যারা দিতে চাইবে না? যারা নাজমাদের আইনের জোরে ঘরছাড়া করবে, তাঁদের জন্য পরামর্শ? কোনও সিদ্ধান্ত?
0 Comments
Post Comment